হেপাটাইটিস বি
হেপাটাইটিস বি কীভাবে ছড়ায় লক্ষণ ও চিকিৎসা কী
হেপাটাইটিস বি হলো হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি লিভারের রোগ। এটি তীব্র (স্বল্প ও গুরুতর) বা দীর্ঘস্থায়ী (দীর্ঘমেয়াদি) হতে পারে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসকে “নীরব ঘাতক” বলা হয় এবং বাংলাদেশে এর প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্য।
হেপাটাইটিস বি কীভাবে ছড়ায়
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস শরীরের বিভিন্ন তরল যেমন রক্ত, লালা, যোনী তরল ও বীর্যের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
আমাদের দেশে এটি ইনজেকশনের মাধ্যমে বেশি ছড়ায়, বিশেষ করে যারা মাদক গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে। একই সুঁই অনেকবার ব্যবহার করার কারণে এটি ঘটে। কিছু ক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমেও হয়, যদিও এখন এটি অনেক কমে গেছে।
বাবা-মায়ের হেপাটাইটিস বি থাকলে বাচ্চারও হতে পারে, বিশেষ করে মায়ের থাকলে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দানের মাধ্যমে, ট্যাটু করার মাধ্যমে, সার্জিক্যাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং যৌন মিলনের ফলেও সংক্রমিত হতে পারে।
হেপাটাইটিস বি একটি নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন দ্বারা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। সাধারণত জন্মের পর কয়েক সপ্তাহ পরে বুস্টার দিয়ে দেওয়া হয়। এটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রায় ১০০ শতাংশ সুরক্ষা দেয়।
হেপাটাইটিস বি এর প্রাদুর্ভাব
বিশ্বব্যাপী ২ বিলিয়ন মানুষ (প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন) এই রোগটিতে সংক্রমিত হয়েছেন এবং প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ নিয়ে জীবন যাপন করছেন। প্রতি বছর প্রায় ১ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস বি সংক্রমণে মারা যান, যদিও এটি প্রতিরোধযোগ্য ও চিকিৎসাযোগ্য অসুখ।
হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ
সংক্রমিত হলে অধিকাংশ মানুষ কোনো উপসর্গ অনুভব করেন না। সাধারণত সংক্রমণের ১ থেকে ৪ মাস পর লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের মধ্যে, কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে।
হেপাটাইটিস বি এর সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলো হলো:
- পেটে ব্যথা
- গাঢ় প্রস্রাব
- জ্বর
- সন্ধিতে যন্ত্রণা
- ক্ষুধামান্দ্য
- বমি বমি ভাব ও বমি
- দুর্বলতা ও ক্লান্তি
- ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া, যাকে জন্ডিস বলা হয়
গুরুতর সংক্রমণ বা লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হলে মৃত্যুও হতে পারে।
হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা
একিউট হেপাটাইটিস বি সংক্রমণে সাধারণত কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের প্রয়োজন হয় না। তবে, ক্রনিক হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমণে অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের প্রয়োজন হয়। ইনজেকশন ও মুখে খাওয়ার ওষুধ উভয়ই সহজলভ্য।
মুখে খাওয়ার ওষুধ সাধারণত সারাজীবন খেতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করা উচিত নয়, কারণ এতে লিভার আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বর্তমানে বিদ্যমান ওষুধগুলো হেপাটাইটিস বি ভাইরাসকে নির্মূল করতে পারে না, তবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সামান্য।
প্রতিরোধ
হেপাটাইটিস বি একটি প্রাণঘাতী ভাইরাস হলেও টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। বাংলাদেশে ২০০৩-০৫ সাল থেকে শিশু জন্মের পর ইপিআই ভ্যাকসিন শিডিউলের মাধ্যমে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। পূর্ণবয়স্ক মানুষও যেকোনো বয়সে এই ভাইরাসের টিকা নিতে পারেন। ০, ১ ও ৬ মাস অন্তর মোট ৩ ডোজ টিকা নিলে এই রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
টিকা নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। More