হেপাটাইটিস সি ভাইরাস
হেপাটাইটিস সি ভাইরাস
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমানে সারা বিশ্বে ৭ কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত। ২০১৬ সালে, এই রোগে প্রায় চার লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সময়মতো শনাক্ত ও চিকিৎসা না হলে এটি লিভার সিরোসিস এবং ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এখনও পর্যন্ত হেপাটাইটিস সি-এর কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি।
বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সি
বাংলাদেশে প্রায় এক কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব। বেসরকারি হিসেবে, প্রতিবছর হেপাটাইটিসে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
আক্রান্তের পরিসংখ্যান
বাংলাদেশে ঠিক কত মানুষ হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশটির অন্তত ১ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত। এটি অনুযায়ী প্রায় ১৬ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।
লক্ষণ ও সমস্যা
এই রোগের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এর লক্ষণগুলি খুব কম। তাই সহজে ধরা পড়ে না। দীর্ঘদিন ধরে শরীরে নীরবে থেকে এটি লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করে। ফলে লিভার সিরোসিস বা ক্যান্সার তৈরি হয়। সাধারণত রোগটি তখনই শনাক্ত হয় যখন এটি অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়ে।
সংক্রমণের উপায়
হেপাটাইটিস সি রক্ত এবং রক্তের উপাদানের মাধ্যমে ছড়ায়। রক্ত পরিসঞ্চালনের সময় এটি সহজেই সংক্রমিত হতে পারে। স্ক্রিনিং ছাড়া রক্ত-রক্তজাত সামগ্রী পরিসঞ্চালন, একই ইনজেকশন বহুবার ব্যবহার, সার্জারি, নাক-কান ছিদ্র করা, মাদক সেবন, অরক্ষিত যৌনমিলন, সমকামিতা, শিশুর জন্মের সময় মায়ের থেকে সন্তানকে সংক্রমণ, এইচআইভি রোগী, কারাগারে থাকা, ট্যাটু করা—এসবের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি
বিশ্বব্যাপী মদ্যপানের কারণে লিভার সিরোসিসের পরেই হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের কারণে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশি। সংক্রমণের পর ২ থেকে ৬ মাসের একটি উইন্ডো পিরিয়ড থাকে, যখন সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় এটি ধরা পড়ে না। এটি নিরূপণে ডিএনএ ভাইরাল মার্কার বা এইচভিসি টোটাল টেস্ট প্রয়োজন হয়।
লক্ষণ ও উপসর্গ
হেপাটাইটিস সিতে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোন লক্ষণ দেখা দেয় না। অনেক সময় লক্ষণ বুঝতে ৮-১০ বছর পার হয়ে যায়। ততদিনে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়। তবে জ্বর, দুর্বলতা, খাবারে অরুচি, বমিবমি ভাব, ক্লান্তি, জন্ডিস হওয়া, পেটে পানি আসা—এসব উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করানো উচিত।
চিকিৎসা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেক সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এটি নিজেই সুস্থ করে তোলে। তবে দীর্ঘদিন আক্রান্ত থাকলে চিকিৎসার দরকার হয়। সম্প্রতি হেপাটাইটিস সি রোগের চিকিৎসায় কিছু কার্যকরী ওষুধ তৈরি হয়েছে, যেগুলো মুখে খাওয়া যায়। এসব ওষুধ দিয়ে ৮০-৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া যাচ্ছে।
প্রতিরোধ
একই সিরিঞ্জ বারবার ব্যবহার না করা, অন্যের সুই ব্যবহার না করা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বা অচেনা উৎস থেকে রক্ত গ্রহণ না করা, যেকোনো সরঞ্জাম ব্যবহার করার সময় সুরক্ষা গ্রহণ করা, বছরে অন্তত দুইবার রক্ত পরীক্ষা করা, আক্রান্ত হলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা—এসব মাধ্যমে হেপাটাইটিস সি প্রতিরোধ করা যায়।
বাংলাদেশের সরকারের ভূমিকা
২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস প্রতিরোধ ও নির্মূলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশকিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। হেপাটাইটিস প্রতিরোধে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের বেশ কিছু কর্মসূচী রয়েছে। হেপাটাইটিস বি’র টিকা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে, কিন্তু পোলিও বা হামের মতো জাতীয় পর্যায়ে টিকা কার্যক্রমের মতো কোন কর্মসূচী এখনো শুরু হয়নি।