লিভার ক্যান্সার

লিভার ক্যান্সার

লিভার ক্যান্সার কি? লিভার ক্যান্সারের কারন প্রতিকার ও চিকিৎসা

লিভার ক্যান্সার হল এমন একটি ধরনের ক্যান্সার যা লিভারের কোষে জন্মায়। লিভার দেহের বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি রক্ত পরিশোধন থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করে। লিভার ক্যান্সার সাধারণত দুটি ধরণের হতে পারে: প্রাথমিক এবং সেকেন্ডারি।

  1. প্রাথমিক লিভার ক্যান্সার (Primary Liver Cancer): এটি লিভারেই শুরু হয়। সবচেয়ে সাধারণ প্রকার হলো হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা (Hepatocellular Carcinoma – HCC), যা মূলত লিভারের প্রধান কোষগুলোতে (হেপাটোসাইট) তৈরি হয়।
  2. সেকেন্ডারি লিভার ক্যান্সার (Secondary Liver Cancer): এটি অন্য কোন অঙ্গ বা টিস্যুতে শুরু হয় এবং পরে লিভারে ছড়িয়ে পড়ে।

লিভার ক্যান্সারের কারণসমূহ সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলির সাথে সম্পর্কিত:

  1. হেপাটাইটিস বি ও সি (Hepatitis B & C): দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস বি বা সি সংক্রমণ লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, কারণ এটি লিভারের দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ এবং ক্ষতি সৃষ্টি করে।
  2. আলকোহলজনিত লিভার রোগ: অতিরিক্ত মদ্যপান লিভারে ক্ষতি করে যা পরবর্তীতে লিভার সিরোসিস এবং ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
  3. লিভার সিরোসিস: লিভারের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি ও প্রদাহের ফলে টিস্যুগুলোতে যে দাগ (স্কার টিস্যু) তৈরি হয়, তা লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  4. অবেসিটি ও ফ্যাটি লিভার ডিজিজ: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে ফ্যাটি লিভার ডিজিজের কারণ হতে পারে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  5. এফ্লাটক্সিন (Aflatoxins): কিছু বিশেষ ধরনের ছত্রাকের দ্বারা উৎপন্ন এফ্লাটক্সিন নামক টক্সিন খাদ্যবস্তুতে থাকতে পারে। এটি লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

লিভার ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে কোন লক্ষণ দেখা নাও দিতে পারে। কিন্তু কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:

  • ওজন কমে যাওয়া
  • ক্ষুধামন্দা
  • উপরের ডান দিকে পেটের ব্যথা
  • বমি ভাব বা বমি
  • চোখ এবং ত্বকের হলুদাভ রঙ (জন্ডিস)
  • পেট ফুলে যাওয়া

লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:

  1. হেপাটাইটিস বি ও সি প্রতিরোধ: হেপাটাইটিস বি-এর টিকা গ্রহণ এবং হেপাটাইটিস সি-এর বিরুদ্ধে কার্যকর চিকিৎসা।
  2. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
  3. মদ্যপানের পরিমাণ কমানো: দীর্ঘমেয়াদী মদ্যপান থেকে বিরত থাকা বা সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা।
  4. এফ্লাটক্সিন থেকে সুরক্ষা: খাদ্য পচে যাওয়া বা নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা।

লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের স্টেজ এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর। কিছু সাধারণ চিকিৎসার পদ্ধতি হল:

  1. সার্জারি (Surgery): যদি ক্যান্সার লিভারের নির্দিষ্ট একটি অংশে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তা অপসারণের জন্য লিভার রিসেকশন বা লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা যেতে পারে।
  2. রেডিওফ্রিকোয়েন্সি এবলেশন (Radiofrequency Ablation – RFA): এটি একটি পদ্ধতি, যেখানে তাপ ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।
  3. কেমোথেরাপি (Chemotherapy): ওষুধের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।
  4. ইমিউনোথেরাপি (Immunotherapy): এটি রোগীর নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
  5. টার্গেটেড থেরাপি (Targeted Therapy): কিছু নির্দিষ্ট প্রোটিন বা জিনগুলির উপর লক্ষ্য করে এই থেরাপি প্রয়োগ করা হয়।

লিভার ক্যান্সার একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, তবে যদি আগেভাগে ধরা পড়ে, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে ভাল ফলাফল পাওয়া সম্ভব। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চলা, নিয়মিত চেকআপ করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ থেকে বিরত থাকা লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। Read More Articles

ডা. মোস্তাক আহমেদ কাজল
গবেষক ও চিকিৎসক
লিভার বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল)
সার্বিক যোগাযোগ: ০১৭৪৬২২৫১১০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button