ভিডিওহেপাটাইটিস বিহেপাটাইটিস সি ভাইরাস

বি ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের জীবন যাপন

বি ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের জীবন যাপন

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সচেতনতা নিয়ে আমরা কোনভাবেই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছি না। বিভিন্ন কুসংস্কার এবং একশ্রেণীর অসাধু মানুষ এই এই অগ্রযাত্রাকে রুখে দিচ্ছে। সামাজিক যেসব কুসংস্কার আছে সেগুলা থেকে বেরিয়ে আসা খুব জরুরী, আমাদের দেশে বেশিরভাগ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস শনাক্ত হয় বিদেশে যাওয়ার মেডিকেল করার সময় আর রক্ত দান করার সময়, প্রথম যখন বি ভাইরাস সনাক্ত হয় তখন মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যায়, যে কোন মূল্যে ভাইরাস নেগেটিভ করতে হবে এরকম একটি ধারণা তার মধ্যে তৈরি হয়, আর এই সুযোগটি নেয় এক শ্রেনীর অসাধু মানুষ। কবিরাজি, বনাজী, বিভিন্ন টনিক, সিরাপ, গাছের ছাল বাকলের রস ইত্যাদির মাধ্যমে গ্যারান্টি সহকারে চিকিৎসার প্রচার আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত। এসব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। after

আমাদের ইউটুব চ্যানেল সাবক্রাইব করুন

মনে রাখতে হবে, হেপাটাইটিস বিভাইরাস রক্তে থাকে লিভারের ক্ষতি করে, এটি ছয় মাসের বেশি যাদের শরীরের পজিটিভ থাকে তাদের সাধারণত নেগেটিভ হয় না, যদি ভাইরাস একটিভ থাকে বা ক্ষতি করে তাহলে কার্যকর চিকিৎসা আছে, আর যদি ক্ষতি না করে তাহলে বছরে কমপক্ষে একবার ফলোআপ দিতে হবে, (ফলোআপ মানে কিছু পরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে) ভাইরাস আপনার শরীরে কোন অবস্থায় আছে, এইটুকুই হচ্ছে বি ভাইরাসের চিকিৎসার মোটামুটি সারসংক্ষেপ।

জীবন যাপনের প্রথমে আসি খাবারের বিষয়টি: হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের জন্য কোন খাবারে নিষেধ নাই, আপনার ধর্মেমতে যা হালাল তাই খেতে পারবেন। কিছু নিয়ন্ত্রণ আছে যাদের শরীরে বি ভাইরাস দিয়ে সিরোসিস এবং ক্যান্সার হয়ে গেছে, লিভারের ভিতরে প্রেসার বেড়ে গলার রক্তনালি ফুলে গেছে(varix) তাদের জন্য অতিরিক্ত লবন বা আলগা লবন খেতে নিষেধ করা হয়, যাদের পেটে পানি চলে এসেছে তাদের পানি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় এগুলো অন্য অসুখের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যেমন কডনি রোগীদের জন্য আলগা লবন ও পানি মেপে খেতে হয়।

এখন সমাজে যে সকল প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা যেমন, এটা ওটা খাওয়া যাবে না, বেশি এটা খেতে হবে, এসব একেবারেই সঠিক নয়, বরং যাদের লিভারে সিরোসিস হয়েছে তাদের জন্য সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খুবই জরুরি, কমপক্ষে ১০০ গ্রাম আমিষ মানে দুই টুকরো মাছ অথবা মাংস খেতে হবে, সাথে সিদ্ধ ডিম কুসুম সহ, হালকা গরম দুধ ৩০০ গ্রাম জরুরি।

ব্যক্তিগত জীবন: হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রান্ত মানুষে-আপনি যে পেশায় আছেন, যা করছেন সবই করতে পারবেন, স্বাভাবিক কাজে কোন বিধি নিষেধ নাই। অনেকেই প্রশ্ন করেন রোদে যাওয়া যাবে কিনা, ভারী কাজ করা যাবে কিনা, ধুলা ময়লার, ফ্যাক্টরীতে কাজ করা যাবে কিনা ইত্যাদি… একটাই উত্তর যতক্ষন পর্যন্ত লিভারে সিরোসিস, ক্যান্সারের মত জটিলতা তৈরী না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি সব কিছুই করতে পারবেন, কারখানায় কাজ করার ক্ষেত্র অন্য সবাই যে-সব সতর্কতা অবলম্বন করে আপনার জন্যও একই। আক্রান্ত ব্যক্তি বিবাহিত হলে অপরজনকে অবশ্যই বি ভাইরাসের টিকা দিতে হবে, এটি কোন ভাবেই ভূল করা যাবে না, বাড়তি সতর্কতা হিসাবে টিকার সবগুলো ডেজ সম্পন্ন হলে টিকার কার্যকারীতা পরীক্ষা করতে হবে।

যারা এখনও বিয়ে করেননি তারা জেনে রাখুন, পাত্র/পাত্রী পূর্ব পরিচিত থাকলে বিয়ের আগেই টিকা নিতে হবে আর যদি পূর্বপরিচিত না থাকে বিয়ের পরপরই Anti HBc total পরীক্ষা করিয়ে নেগেটিভ আসলে টিকা দিতে হবে, টিকা সম্পন্ন হতে ৬ মাস সময় লাগে এই ৬ মাস শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যারিয়ার মেথড বা কনডম ব্যবহার করতে হবে তাহলে সংক্রমন ঝুঁকি এড়ানো যাবে। পারিবারিক জীবন: প্রথমেই কোন পরিবারের একজন সদস্য হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ঐ পরিবারের সকল সদস্য কে টিকার আওতায় আনতে হবে।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের জন্য পারিবারিক জীবনেও তেমন কোনো বিধি নিষেধ নাই, ব্যবহৃত দৈনন্দিন জিনিসপত্র যেমন থালা, বাসন, গ্লাস, প্লেট একই কথা- বালিশ ব্যাবহার, এক বিছানায় ঘুমানো এগুলোর মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি-ভাইরাস ছড়ায় না, তাই এক্ষেত্রেও এমন কোন বিধি নিষেধ নাই। শুধুমাত্র ব্যবহৃত টুথ ব্রাশ, নেইল কাটার, শেভিং রেজার এই জিনিসগুলি আলাদা রাখতে হবে।

সামাজিক জীবন: সামাজিক জীবনে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের জন্য আইনিভাবেও কিছু সুবিধা দেওয়া আছে যেমন বি ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি’কে খেলাধুলা, সভা- সমিতি বা সামাজিক কোন অনুষ্ঠান থেকে বিরত রাখা যাবে না, এটি আইনগত অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে সুতরাং সামাজিকভাবে আপনি সম্পূর্ণ অন্য একজন মানুষের মতোই সাবলীল চলাফেরা করতে পারবেন,

একই নির্দেশনা আপনার কর্মক্ষেত্রেও। ব্যক্তি সচেতনতা: এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাদের শরীরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আছে তারা নিজেরা কিছু বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, যেমন আপনি যখনই কোন চিকিৎসকের কাছে যাবেন সেটা যে প্রয়োজনেই হোক, তাকে জানাতে হবে আপনার শরীরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আছে, (ভাইরাস সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় যে অবস্থায়ই থাক না কেন) কারণ কিছু অসুখে ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ভাইরাস সক্রিয় হতে পারে।

আড়াই মিনিটে জেনে নিন ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণের রাখার উপায়

আপনি ছোটখাটো কোন অপারেশন এমন কি কাটা-ছেঁড়া, সেলাই, দন্ত চিকিৎসকের চিকিৎসা এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীকে জানাতে হবে আপনার শরীরে বি ভাইরাস আছে। কারন আপনার ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি থেকে অন্য মানুষের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। রক্ত পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের সময় স্বাস্থ্যকর্মীকে জানাতে হবে আপনার শরীরে বি ভাইরাস আছে তাহলে স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করে আপনার নমুনা সংগ্রহ করবে। শরীরে কোথাও কেটে গেলে বা রক্ত বের হলে আপনার রক্ত কেউ যেন খালি হাতে স্পর্শ না করে সেয়াল রাখতে হবে।

ডা. মোস্তাক আহমেদ কাজল
গবেষক ও চিকিৎসক
লিভার বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল)
সার্বিক যোগাযোগ: ০১৭৪৬২২৫১১০

আরো পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button